নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাজী টায়ারস কারখানায় লাগা ভয়াবহ আগুন প্রায় ৩২ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত ছয়তলা ভবনটি ধসে পড়ার আশঙ্কা করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে আগুন নিভলেও, ভবনটি অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় রয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক আনোয়ারুল হক জানিয়েছেন, এখনো ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে উদ্ধার অভিযান শুরু করা সম্ভব হয়নি। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তিনি বলেন, “দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর আপাতত অগ্নিশিখা নিভানো সম্ভব হয়েছে, তবে ভবনের ভেতরে এখনও উত্তাপ রয়ে গেছে। অল্প অল্প করে আগুন জ্বলছে।”
ভবনটি বেঁকে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে এবং কয়েকটি জায়গা সুরকির মতো হয়ে গেছে, ফলে ভেতরে প্রবেশ করা যাচ্ছে না। নিচতলার সিঁড়ি পর্যন্ত কেবল পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। টার্ন টেবিল ল্যাডারের সাহায্যে ভবনের ছাদে একবার তল্লাশি চালানো হয়েছে, তবে ছাদের কোনো অংশে হতাহত কাউকে পাওয়া যায়নি। আগুন নিভাতে সক্ষম হওয়ায় সবকিছু বিবেচনা করে ভেতরে উদ্ধার অভিযান শুরু করা হবে বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা।
রোববার ভোররাতে রাজধানীর শান্তিনগর এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী গ্রেপ্তার হওয়ার পরপরই স্থানীয় কিছু মানুষ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে একটি মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোকজন জড়ো করে। তারা পরে তারাবো রূপসী এলাকায় গাজী টায়ারসের কারখানায় হামলা চালিয়ে লুটপাট শুরু করে এবং রাত ৯টার দিকে কারখানায় আগুন লাগিয়ে দেয়।
সোমবার সন্ধ্যা ৭টা ৫ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল করিম জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে সোমবার রাত ২টার দিকেও ভবনটিতে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে।
মঙ্গলবার সকালে ভবনটিতে আগুন না দেখা গেলেও প্রচুর ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। এদিকে ভোর থেকে থেমে থেমে বৃষ্টিও হয়েছে।
রোববার রাতে লুটপাটের সময় কারখানায় উপস্থিত প্রায় ২০০ জন মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন বলে স্বজনরা দাবি করেছেন। তারা সোমবার দিনভর কারখানার সামনে নিখোঁজদের খোঁজে আহাজারি করেছেন এবং নিখোঁজদের নাম ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের কাছে জমা দিয়েছেন।
মঙ্গলবার সকালেও কারখানার সামনে নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনদের ভিড় দেখা গেছে।
এর আগে গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গাজীর রূপসী ও কর্ণগোপের দুটি কারখানায় হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।