Headlines

পৃথিবীর অভ্যন্তরে লুকানো স্তরের সন্ধান: চরম বৈশিষ্ট্যের ইউএলভিজেড অঞ্চল আবিষ্কারের দাবি বিজ্ঞানীদের

 

বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি পৃথিবীর গভীরে একটি “লুকানো স্তর” আবিষ্কারের দাবি করেছেন।

‘পিকেপি’ নামে পরিচিত এক ধরনের অদ্ভুত ভূকম্পীয় সংকেত কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানীদের বিভ্রান্ত করে আসছে। এই সংকেতগুলো ভূমিকম্পের প্রধান তরঙ্গের আগেই পৃথিবীর কেন্দ্রের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করে ভূপৃষ্ঠে পৌঁছে যায়।

এতদিন এই সংকেতগুলো রহস্যে আবৃত ছিল, কিন্তু সম্প্রতি ‘ইউনিভার্সিটি অফ ইউটাহ’-এর ভূতাত্ত্বিকদের নতুন একটি গবেষণায় এই রহস্য উন্মোচিত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।

গবেষণায় দেখা গেছে, পিকেপি সংকেতগুলো আসলে ‘আল্ট্রা-লো ভেলসিটি জোনস’ (ইউএলভিজেড) নামে পরিচিত অতি-নিম্ন বেগের অঞ্চলের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে। এই অঞ্চলগুলো পৃথিবীর ম্যান্টলের পাতলা স্তরে অবস্থিত, যেখানে ভূমিকম্পের তরঙ্গ নাটকীয়ভাবে ধীর হয়ে যায়।

 

এই গবেষণাটি ‘এজিইউ অ্যাডভান্সেস’ নামে একটি বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণার ফলাফলে ইঙ্গিত মিলেছে যে, ইয়েলোস্টোন, হাওয়াইয়ান দ্বীপপুঞ্জ এবং আইসল্যান্ডের মতো বৃহৎ আগ্নেয়গিরির হটস্পটগুলো গঠনে এই ইউএলভিজেড অঞ্চলগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

 

গবেষণার প্রধান লেখক ও ‘ইউনিভার্সিটি অফ ইউটাহ’-এর ভূতত্ত্ব ও ভূপদার্থবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক মাইকেল থর্ন বলেন, “পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত চরম বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে এই অঞ্চলগুলো অন্যতম। আমরা এখনও পুরোপুরি জানি না এগুলো কী।”

 

থর্ন ও তাঁর গবেষণা দল আবিষ্কার করেছেন যে, ইউএলভিজেড অঞ্চলগুলো প্রায়শই আগ্নেয়গিরির হটস্পটের নিচে জড়ো হয়। গবেষকদের মতে, ম্যান্টলের বিভিন্ন প্লামের মূল হতে পারে এই অঞ্চলগুলো, যা বৃহৎ আকারের এবং নাছোড়বান্দা প্রকৃতির আগ্নেয়গিরি তৈরি করে।

 

থর্নের দল ৫৮টি ভূমিকম্পের তথ্য বিশ্লেষণ করতে উন্নত ভূকম্পীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে। এই ভূমিকম্পগুলো অস্ট্রেলিয়ার নিউ গিনি দ্বীপের কাছে ঘটেছিল এবং উত্তর আমেরিকায় রেকর্ড করা হয়েছিল। ভূমিকম্পের তরঙ্গের মডেল তৈরির জন্য একটি নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করে, তারা পৃথিবীর বাইরের কোর ও ম্যান্টলের সীমানা বরাবর পিকেপি সংকেতের উৎস শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। এই সীমানাটি পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২৯০০ কিলোমিটার নিচে অবস্থিত।

 

গবেষণার ফলাফল থেকে জানা গেছে, পিকেপি সংকেতের পূর্বসূরীগুলো সম্ভবত এই ‘কোর-ম্যান্টল’ সীমানায় অবস্থিত ইউএলভিজেড অঞ্চলগুলো থেকে উৎপন্ন হচ্ছে।

 

থর্নের মতে, এই অঞ্চলগুলো অতি-নিম্ন বেগের এলাকায় তৈরি হয়, যা টেকটোনিক প্লেটগুলোর নিচে অবস্থান করছে। এগুলো পৃথিবীর ভূত্বকের এমন একটি অংশ যা ম্যান্টলের মধ্যে ডুবে আছে এবং মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে উঠে আসা প্লেটগুলো ‘কোর-ম্যান্টল’ সীমানায় আঘাত করেছে। বিশেষ করে উত্তর আমেরিকার নিচে এর অবস্থান।

 

থর্ন বলেন, “বর্তমানে আমরা যা পেয়েছি তা হলো– এই অতি-নিম্ন বেগের অঞ্চলগুলো শুধু বিভিন্ন আগ্নেয়গিরির হটস্পটের নিচেই নয়, বরং উত্তর আমেরিকার নিচে ‘কোর-ম্যান্টল’ সীমানা জুড়েও ছড়িয়ে আছে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *