পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডে অবস্থিত ‘ঢাকা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার’-এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে।
বলা হচ্ছে, চিকিৎসাসেবার আড়ালে বছরের পর বছর প্রতিষ্ঠানটি ব্যবসা চালিয়ে আসছিল। ভুল অস্ত্রোপচারের কারণে রোগীর মৃত্যু এবং নারী রোগীদের বন্ধ্যাত্বের মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজের শিক্ষার্থীরা এবং সাধারণ মানুষ সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে হাসপাতালটিতে অবস্থান নেন।
হাসপাতালটি নাজিম উদ্দিন রোডের ৫১ নাম্বার বাড়ির নিচতলা ও দোতলায় গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, রড-সিমেন্টের তৈরি বাড়ির ভেতরে ঝুপড়ি ঘরের মতো ছোট ছোট রুম নিয়ে হাসপাতালটি পরিচালনা করা হচ্ছে। রুমগুলো নোংরা ও ধুলোময়, যা দেখে মনে হয় যেন হাসপাতাল নিজেই রোগাক্রান্ত।
শিক্ষার্থীরা হাসপাতালের পরিচালকের রুম দেখিয়ে বলেন, সেখানে একাধিক ভূঁইফোড় অনলাইন পোর্টালের বুম ও গণমাধ্যমের ক্যামেরা রয়েছে। পরিচালকের নাম দেখা যায় ‘সাংবাদিক হাফেজ মহিউদ্দিন’। উপস্থিত কয়েকজন জানান, অখ্যাত গণমাধ্যমের নাম ব্যবহার করে ভয়-ভীতি দেখিয়ে এই হাসপাতালটি চিকিৎসাসেবার নামে ব্যবসা চালিয়ে আসছিল।
একটি চক্রের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী এনে দিনের পর দিন ভুয়া চিকিৎসার মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হচ্ছিল। বিশেষ করে গ্রামের সহজ-সরল রোগীদের টার্গেট করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এখানে নিয়ে আসা হতো। হাসপাতালটিতে কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পাওয়া না গেলেও এক নার্স ও একজন ওয়ার্ড বয় জানান, তারা সেখানে চাকরি করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘এইচএম শামসুদ্দিন’ নামে একজনকে আটক করেন।
শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজের শিক্ষার্থী মো. শাকিল জানান, “আমরা জানতে পারি, ভুল চিকিৎসার কারণে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা সোনিয়া নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে অনেক নারী চিরতরে বন্ধ্যাত্বের শিকার হয়েছেন। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা এখানে এসে দেখি যে, হাসপাতালে কোনো চিকিৎসক নেই, রোগীদের আটক করে রাখা হয়েছে।”
এ ছাড়া তিনি আরও জানান, দ্বিতীয় তলার ছোট ছোট রুমগুলোতে রোগীদের বন্দী করে টাকা আদায় করা হচ্ছিল। তারা সেনাবাহিনী ও পুলিশকে খবর দিয়েছেন এবং শামসুদ্দিন নামে একজনকে আটক করেছেন, যিনি নিজেকে কখনও পরিচালক, কখনও চেয়ারম্যান বলে পরিচয় দিচ্ছেন।
অন্যদিকে, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থেকে আসা রাহেলা নামে এক রোগীর মেয়ে জানান, “আমাদের এখান থেকে বের হতে দেওয়া হয়নি এবং একের পর এক পরীক্ষার নামে চিকিৎসা করানোর কথা বলা হয়েছিল।”
এক রোগী জানান, সোনিয়া নামে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীকে ভুল চিকিৎসা করা হয়েছিল, যার ফলে তার এবং তার পেটের শিশুর মৃত্যু হয়।
বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতিকুর রহমান জানিয়েছেন, অভিযোগ পেয়ে নাজিম উদ্দিন রোডের ওই হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।