বিনা সংকটে চালের দাম বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত দেড় মাসে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি চালের দাম ২ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
দেশের ১৪ জেলায় বন্যার কারণে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকার পাশাপাশি ত্রাণ কার্যক্রমে বিপুল পরিমাণ চাল প্রয়োজন হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির অজুহাতে ৫০ কেজির প্রতি বস্তায় চালের দাম ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। একই সঙ্গে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের মোকামগুলোতে ধান ও চাল মজুত করে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানোর অভিযোগও উঠেছে। বিশ্ববাজারে চালের দাম দেশের বাজারের তুলনায় বেশি হওয়ায় আমদানির সম্ভাবনাও কম। অক্টোবর মাস পর্যন্ত চালের বাজারে অস্থিরতা থাকতে পারে। তবে নভেম্বরে আমন ধান কাটা শুরু হলে চালের দাম কমতে পারে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পর্যাপ্ত মজুত এবং সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক থাকা সত্ত্বেও বন্যা, ত্রাণ এবং আন্তর্জাতিক বাজারের অজুহাতে চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে। বিশেষ করে রাজশাহী, নওগাঁ, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, পাবনা এবং বগুড়ার মতো ধান উৎপাদন এলাকায় মজুত রেখে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে। এ অবস্থায় সিন্ডিকেট প্রথা ভাঙতে চাল আমদানির জন্য এলসি উন্মুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কয়েকটি খুচরা ও পাইকারি বাজারে সরেজমিনে জানা গেছে, খুচরা বাজারে জাত ও মানভেদে প্রতি কেজি দেশি বাসমতি ৯০ থেকে ৯৫ টাকা, মিনিকেট চাল ৬৮ থেকে ৭৫ টাকা, নাজিরশাইল চাল ৬৮ থেকে ৮০ টাকা, মাঝারি মানের বিআর ২৮ ও ২৯ নম্বর চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, মোটা স্বর্ণা ৫৭ টাকা এবং হাইব্রিড মোটা ৫৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গত জুলাই মাসে খুচরা বাজারে দেশি বাসমতি ৮৪ থেকে ৯০ টাকা, মিনিকেট চাল ৬২ থেকে ৬৮ টাকা, নাজিরশাইল চাল ৬৫ থেকে ৭৮ টাকা, বিআর ২৮ ও ২৯ নম্বর চাল ৫৪ থেকে ৫৬ টাকা, মোটা স্বর্ণা ৫৪ টাকা এবং হাইব্রিড মোটা চাল ৪৮ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
বর্তমানে পাইকারি বাজারে চিকন মিনিকেট চাল মানভেদে ৬৫ থেকে ৭২ টাকা, নাজিরশাইল চাল ৬৫ থেকে ৭৪ টাকা, দেশি বাসমতি ৮৫ থেকে ৮৮ টাকা, বিআর ২৮ নম্বর চাল ৫৭ টাকা, বিআর ২৯ নম্বর চাল ৫৮ টাকা, পাইজাম ৫৫ থেকে ৫৭ টাকা, মোটা চাল গুটি স্বর্ণা ৫৪ টাকা এবং হাইব্রিড ধানের মোটা চাল ৪৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মার্কিন কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর ‘বাংলাদেশ গ্রেইন অ্যান্ড ফিড আপডেট, আগস্ট–২০২৪’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ১৪ জেলায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রভাব চালের বাজারে পড়েছে। সরকারি গুদামে চালের মজুতও কম থাকায় সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে চালের বাজার অস্বাভাবিক থাকবে। তবে নভেম্বরে দাম কিছুটা কমতে পারে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, দেশে বছরে মোট চালের চাহিদা ৩ কোটি ৭০ লাখ টনের বেশি। বন্যার কারণে এ বছরে চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ শতাংশ কমে ৩ কোটি ৬৮ লাখ টন হতে পারে।
পুরান ঢাকার বাবুবাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী মেসার্স রশিদ রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী আবদুর রশিদ জানান, আগস্টে ছাত্র আন্দোলনের পর থেকে চালের দাম বাড়তে শুরু করে। এরপর দেশের ১৪ জেলায় বন্যা এবং আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৬ টাকা বেড়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে কোনো চাল আমদানি হচ্ছে না। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এই সুযোগে ধান ও চাল মজুত করে বাজারে সংকট সৃষ্টি করছে এবং চালের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলসি উন্মুক্ত করার পাশাপাশি মনিটরিং বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।
খাদ্য সচিব ইসমাইল হোসেন জানান, বর্তমানে সরকারি গুদামে ১৯ লাখ টন খাদ্য মজুত আছে যা নিরাপদ পরিসরে রয়েছে। এ মুহূর্তে দেশে খাদ্যের কোনো সংকট নেই এবং সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তিনি বলেন, চালের দাম ২-৫ টাকা বেড়েছে, তবে বাজার এখনও নিয়ন্ত্রণে আছে।