সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার চিকসা গ্রামে সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে গান-বাজনা নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্থানীয় সালিসকারীরা। শনিবার রাতে গ্রামে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা আইনগতভাবে কার্যকর করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, এই নিষেধাজ্ঞা না মানলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জুনাব আলী জানিয়েছেন, উচ্চ শব্দে গান-বাজনার কারণে শিশু, বৃদ্ধ ও রোগীদের অসুবিধা হয়, পাশাপাশি শব্দ দূষণের কারণে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এসব কারণে গ্রামের মাতব্বররা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং তিনি একে ‘সুন্দর উদ্যোগ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শফিকুল হক জানিয়েছেন, গ্রামে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও সেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনও বসবাস করেন। সামাজিক অনুষ্ঠানে উচ্চশব্দে গান-বাজনার কারণে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। এই কারণে গ্রামের মাতব্বররা সর্বসম্মতিক্রমে গান-বাজনা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে, এই সিদ্ধান্ত শুধু মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য প্রযোজ্য, হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য নয়।
চিকসা গ্রামের বাসিন্দা উমেদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সঞ্জয় পুরকায়স্থ জানিয়েছেন, তিনি সালিসের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না কিন্তু শোনা গেছে যে, এখন থেকে সামাজিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠানে গান-বাজনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যদিও হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য এটি প্রযোজ্য নয়।
তবে সংস্কৃতিকর্মীরা এই সিদ্ধান্তকে ‘অশুভ ইঙ্গিত’ হিসেবে দেখতে শুরু করেছেন। বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে মন্তব্য করেছেন, একটি জাতির সমৃদ্ধি তার সাংস্কৃতিক চর্চার ওপর নির্ভর করে, এবং গান-বাজনা নিষিদ্ধ করার বিষয়টি সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ খেলাঘর আসরের সভাপতি বিজন সেনরায়ও এই সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং বিষয়টিকে সহজভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই বলে মত দিয়েছেন।
তাহিরপুর থানার ওসি এস এম মাইনুল জানিয়েছেন, তিনি গান-বাজনা বন্ধের বিষয়টি শুনেছেন, তবে এখনো লিখিত কোনো তথ্য তার কাছে পৌঁছেনি।