ঢাকা চেম্বারের বাণিজ্য সম্মেলনে গতকাল ব্যবসায়ী নেতারা বলেছেন, দেশের ব্যাংক খাতে অরাজকতা চলছে। এ পরিস্থিতিতে ব্যবসা চালিয়ে নেওয়া কঠিন। তাঁরা বলেছেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি এখনো পুরোপুরি হয়নি। ব্যবসায়ীদের নামে অযথা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। এখন মামলা বাণিজ্য শুরু হয়েছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতের অমিল থাকলেই মামলা দেওয়া হচ্ছে।
রাজধানীর একটি হোটেলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘প্রাইভেট সেক্টর আউটলুক; প্রত্যাশা ও অগ্রাধিকার’ শীর্ষক বাণিজ্য সম্মেলনে এসব কথা বলেন ব্যবসায়ী নেতারা।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদের সঞ্চালনায় সম্মেলনে প্রধান অতিথি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ও বিশেষ অতিথি হিসেবে বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশিরউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিএবির সভাপতি আবদুল হাই সরকার, বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, ফিকির সভাপতি জাভেদ আখতার, এবিবির সভাপতি সেলিম আর এফ হোসেন, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং সিইও আহসান খান চৌধুরী ও ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও এমডি আবদুল মোক্তাদির এ বাণিজ্য সম্মেলনে প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
প্রধান অতিথি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, গত ১৫ বছরে অর্থনৈতিক খাতে যে দুর্নীতি হয়েছে, তা অকল্পনীয় এবং সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যাংকের ডিপোজিট থেকে টাকা নিয়ে চলে গেছে, যার দৃষ্টান্ত বিরল। তিনি বলেন, আমরা এমনভাবে সংস্কার করব যাতে ভবিষ্যতে কেউ টাকা-পয়সা পাচার করতে না পারে। এজন্য আমরা সংস্কার করছি। আমরা ব্যাংকিং সেক্টর এবং এনবিআরকে সংস্কার করছি।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন বলেন, সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে কাজ করছে। শিল্পমালিকরা সমস্যা থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। মালিকরা দূরে সরে গেলে আন্দোলন বেশি ছড়ায়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে সরকারের সঙ্গে বেসরকারি খাতের সমন্বয় প্রয়োজন।
বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। এখন নতুন ব্যবসা চালু হয়েছে- মামলা বাণিজ্য। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কারও মতের অমিল হলে মামলা দেওয়া হয়। ব্যক্তিগত শত্রুতা থাকলে তাকে মামলা দেওয়া হয়। এসব মামলা বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। যারা কোনো অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন তাদের নামে মামলা বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, ব্যাংক খাতে অরাজকতা চলছে। ব্যাংকিং সেক্টরে নানা রকমভাবে আমরা বাধার সম্মুখীন হচ্ছি। রপ্তানি করলে টাকা পাই না। কারখানার বেতন দেওয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রণোদনার ৬ হাজার কোটি টাকা জমা রয়েছে। সে টাকা পাচ্ছি না। তিনি ট্রেড বডির রাজনীতি বন্ধ করারও দাবি জানান।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আগামী বছরের শুরুতেই নীতি সুদহার এবং সুদহার ক্রমান্বয়ে কমাতে হবে। এ ছাড়া বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, পণ্য ব্যবস্থাপনায় চাঁদাবাজি রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। পণ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে শিল্পকারখানায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহের ওপর জোর দেন তিনি।
বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ব্যাংকের টাকা লুট করছে যারা তাদের ভর্তুকি আমরা কেন দেব। আমরা প্রকৃত ব্যবসায়ী। আমরা তো এখনো কারখানা নিয়ে ঝুলে আছি। যারা লুটপাট করছে তারা তো ভালো আছে। এ সেক্টরে যারা লুটপাট করছে তাদের শাস্তি দিতে হবে। তিনি বলেন, দেশে ব্যবসা করতে অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি খরচ।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন হলে ব্যবসার উন্নয়ন আসবে। ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে না পারলে উৎপাদন ও কর্মসংস্থান দুটোই ব্যাহত হবে।
ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান ও এমডি আবদুল মোক্তাদির বলেন, শিল্পকারখানায় অস্থিরতা কাম্য নয়। তাই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ থাকতে হবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন পণ্যের উচ্চ আমদানি শুল্ক হারের কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি এবং ছোট ব্যবসায়ীরা কঠিন পরিস্থিতি পার করছেন।