নিজেদের নিয়ম ভেঙে বিশেষ বিবেচনায় সাবেক এক ব্যাংকারকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পর, সেই নিয়োগ বাতিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বাধীন বেসরকারি আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম সারওয়ারকে, অবসর নেওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে কৌশলগত উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার অনুমতি দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে ক্ষমতার পালাবদলের পর এই নিয়োগটি বাতিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং বুধবার আইএফআইসি ব্যাংকে সেই নির্দেশ পাঠানো হয়েছে।
আইএফআইসি ব্যাংকের ডেপুটি ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল ইসলাম জানান, “বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ বিবেচনায় তাকে উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়েছিল। ২৬ মে থেকে তিনি কৌশলগত উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দেন। কিন্তু গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক চিঠি দিয়ে এই পদটি বাতিল করেছে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে অবসর নেওয়ার পাঁচ বছর পার না হলে সেই ব্যাংকের পরামর্শক বা উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ২০২১ সালে এই বিধান চালু করা হয়েছিল। কিন্তু আইএফআইসি ব্যাংক এই নিয়ম উপেক্ষা করে সাবেক এমডি শাহ আলম সারওয়ারকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেয়, যা সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের অনুমোদনে সম্ভব হয়েছিল।
শাহ আলমের এমডি হিসেবে মেয়াদ শেষ হয় ১৩ মে, এবং মাত্র দুই সপ্তাহ পরেই তিনি ২৬ মে উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দেন। জানা গেছে, ব্যাংক খাতের অন্যান্য উপদেষ্টাদের চেয়ে শাহ আলম সারওয়ার অনেক বেশি বেতন পেতেন। যেখানে উপদেষ্টাদের বেতন সাড়ে পাঁচ লাখ টাকার মধ্যে থাকে, সেখানে তিনি কয়েকগুণ বেশি বেতন পেতেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ন্যাশনাল ব্যাংক তাদের অবসরপ্রাপ্ত এমডি মেহমুদ হোসেনকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগের অনুমোদন চেয়ে আবেদন করলে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। কিন্তু প্রভাবশালীদের চাপের মুখে শাহ আলমের নিয়োগ অনুমোদন করা হয়।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এখনও আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন। ক্ষমতার পরিবর্তনের পর তার ছেলে আহমেদ শায়ান এফ রহমান ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন। শায়ান রহমান ঋণ খেলাপি না হওয়ায় পুনরায় পরিচালক হওয়ার আবেদন করলে, বাংলাদেশ ব্যাংক তা অনুমোদন না করলে তিনি পর্ষদ থেকেও বাদ পড়েন।
এদিকে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে সালমান রহমানও গ্রেপ্তার হন। তার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে এবং তাকে কয়েক দফা রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছে।
২০০৯ সালে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর সালমান এফ রহমান আইএফআইসি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেন এবং ২০১০ সালে চেয়ারম্যান হন। তখন তার হাতে ব্যাংকের ৩০ শতাংশ শেয়ার ছিল।