Headlines

নাসার আইসনোড প্রকল্প: আর্কটিক বরফের নিচে রোবট পাঠিয়ে গলার গতি ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির পর্যবেক্ষণ

নাসার ‘জেট প্রোপালশন ল্যাবরেটরি’ (জেপিএল)-এর প্রকৌশলীরা আলাস্কার বিউফোর্ট সাগরের বরফগলা পানিতে নতুন এক অভিযান শুরু করেছেন। তাঁরা বরফের নিচে একটি সুরঙ্গ তৈরি করেছেন এবং সেই সুরঙ্গ দিয়ে একটি নলাকার রোবট পাঠিয়েছেন, যা হিমশীতল সমুদ্রের গভীরে পৌঁছেছে।

এই অভিযানটি ‘আইসনোড’ প্রকল্পের অংশ, যার লক্ষ্য হচ্ছে অ্যান্টার্কটিকার গলে যাওয়া বরফের বিভিন্ন স্তর থেকে তথ্য সংগ্রহ করা। প্রকল্পটি বিশেষভাবে ডিজাইন করা রোবট ব্যবহার করে বরফের নিচে অনুসন্ধান চালানোর উদ্দেশ্যে।

আইসনোড প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্য হলো অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলনের হার নির্ধারণ করা এবং এর ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা কতটা বৃদ্ধি পাচ্ছে তা জানা। বিজ্ঞানীরা জানেন যে, বরফের পুরো চাদর গলে গেলে বিশ্বব্যাপী সমুদ্রের স্তর প্রায় ২০০ ফুট (৬০ মিটার) বৃদ্ধি পাবে, যা উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। তবে, বরফ গলনের গতির সঠিক পূর্বাভাসের জন্য আরও তথ্য প্রয়োজন।

অ্যান্টার্কটিকার বরফ গবেষণার একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো বরফ গলনের দ্রুত ঘটমান অঞ্চলে মানুষের পৌঁছানো কঠিন। বিশেষ করে পানির নিচে কিছু অঞ্চলে, যেখানে বরফের বিশাল স্তর সমুদ্রের তলদেশে চাপা থাকে। এসব এলাকায় পৌঁছানো এবং তথ্য সংগ্রহ করা অত্যন্ত কঠিন।

এ সমস্যা সমাধানে ‘আইসনোড’-এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। জেপিএল-এর প্রকৌশলীরা প্রায় ৮ ফুট (২.৪ মিটার) লম্বা এবং ১০ ইঞ্চি (২৫ সেন্টিমিটার) ব্যাসের রোবট তৈরি করেছেন যা বরফের স্তরের গভীরে পাঠানো হবে। এই রোবটগুলোর তিনটি পায়ের ‘ল্যান্ডিং গিয়ার’ রয়েছে, যা বরফের নিচে তাদের স্থানান্তর এবং বরফ গলানোর প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে সহায়তা করে।

রোবটগুলিতে কোনও প্রপালশন সিস্টেম নেই; বরং উন্নত সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়েছে যা তাদের স্রোতের মাধ্যমে নির্ধারিত স্থানে পৌঁছাতে সহায়তা করে। একবার সেখানে পৌঁছালে, রোবটগুলি তাদের ‘ব্যালাস্ট’ ছেড়ে দেয় এবং বরফের সঙ্গে যুক্ত হয়। তারা গরম ও লবণাক্ত সমুদ্রের পানি কীভাবে বরফ গলাচ্ছে এবং ঠাণ্ডা পানি কেমন আচরণ করছে তা পরিমাপ করে।

এই রোবটগুলো এক বছর পর্যন্ত কাজ করতে সক্ষম এবং ঋতু পরিবর্তনের তথ্য সংগ্রহ করবে। মিশন শেষে, রোবটগুলি বরফ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে খোলা সমুদ্রের দিকে চলে যাবে এবং কৃত্রিম স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তথ্য বিজ্ঞানীদের কাছে পাঠাবে।

২০২৪ সালের মার্চে বিউফোর্ট সাগরে এই পরীক্ষাটি প্রথমবারের মতো মেরু পরিবেশে প্রোটোটাইপের পরীক্ষা করা হয়। মার্কিন নৌবাহিনীর ‘আর্কটিক সাবমেরিন ল্যাবরেটরি’-এর আইস ক্যাম্পের অংশ হিসেবে পরিচালিত এই পরীক্ষাটি গবেষকদের কঠোর আর্কটিক পরিস্থিতিতে কাজ করার আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে, যেখানে তাপমাত্রা মাইনাস ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যায়।

পরীক্ষার সময়, রোবটটি ৩৩০ ফুট (১০০ মিটার) গভীরতায় নেমে লবণাক্ততা, তাপমাত্রা ও পানি প্রবাহের তথ্য সংগ্রহ করেছে। ভবিষ্যতের মিশনের জন্য রোবটগুলির উন্নয়নের বিভিন্ন বিষয় চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা। জেপিএল-এর রোবোটিক্স প্রকৌশল ও আইসনোড প্রকল্পের প্রধান অনুসন্ধানকারী পল গ্লিক বলেছেন, “আমরা যে অগ্রগতি করেছি, তাতে আমরা সন্তুষ্ট। আমাদের লক্ষ্য হলো এই প্রোটোটাইপগুলির উন্নয়ন চালিয়ে যাওয়া এবং অবশেষে অ্যান্টার্কটিক বরফের নিচে রোবটের একটি সম্পূর্ণ বহর তৈরি করা।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *