গাজা ভূখণ্ডে পোলিও টিকাদান কর্মসূচি চলাকালেই বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী, এতে একদিনে অন্তত ২৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, শুক্রবার (৭ সেপ্টেম্বর) গাজা উপত্যকাজুড়ে এ হামলা চালানো হয়। ফিলিস্তিনে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গাজার বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলা হয়। গাজা সিটিতে বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন ৮ জন। নুসেইরা শরণার্থী শিবিরে দুই নারী ও দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া, খান ইউনিস, রাফা এবং জেইতুনের বাসিন্দাদেরও মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
গাজা উপত্যকায় শিশুদের পোলিও টিকাদান কর্মসূচি ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে। জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), ইউনিসেফ এবং ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (আনরোয়া) এই কর্মসূচি তত্ত্বাবধান করছে। কর্মসূচি চলাকালীন ইসরায়েলি বাহিনী এবং হামাস প্রতিদিন ৯ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।
প্রথমে কর্মসূচির মেয়াদ ১ থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নির্ধারিত থাকলেও রাফায় আশ্রয় নেওয়া ফিলিস্তিনিদের দাবির মুখে তা বাড়ানো হয়, কারণ যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে রাফায় অনেক শিশু টিকা পায়নি।
শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক বার্তায় আনরোয়া জানায়, “১ সেপ্টেম্বর টিকাদান কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ৩ লাখ ৫৫ হাজার শিশুকে পোলিও টিকা খাওয়ানো হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য ১ থেকে ১০ বছর বয়সী সব শিশুকে টিকার আওতায় আনা।”
এদিকে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজা শহরের জেইতুন শহরতলিতে হামাস যোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। খান ইউনিসের পূর্বে ও মিশরের সীমান্তের কাছে রাফাতে ট্যাংক নিয়ে টহল দিচ্ছে এবং এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বেশ কিছু বাড়িঘর উড়িয়ে দিচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজায় বিমান ও স্থল হামলা অব্যাহত রেখেছে। এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ অসংখ্য স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। গত ১১ মাসে ইসরায়েলি আক্রমণের ফলে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন, এবং গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
ইসরায়েলের এই আক্রমণ থামাতে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার, মিসরসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দীর্ঘদিন ধরে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এখনও পর্যন্ত গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে। ইসরায়েলি ও বিদেশি জিম্মিদের মুক্তি এবং ইসরায়েলে বন্দি ফিলিস্তিনিদের ছাড়াতে কোনো মধ্যস্থতাকারী দেশ যুদ্ধবিরতি চুক্তি করতে সফল হয়নি।