Headlines

১৫ বছরে ২৫ হাজার ২০০ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি: দিলীপ আগরওয়ালার বিরুদ্ধে তদন্তে প্রভাবশালী মহলের হস্তক্ষেপে ধামাচাপা

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প বাণিজ্য উপ-কমিটির সদস্য এবং সাম্প্রতিক ছাত্র হত্যা মামলার আসামি দিলীপ কুমার আগরওয়ালার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড গত ১৫ বছরে ২৫ হাজার ২০০ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে বলে গোয়েন্দা তদন্তে উঠে এসেছে। তবে সেই তদন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের হস্তক্ষেপে ধামাচাপা দেওয়া হয়।

তদন্তে জড়িত বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর থেকে তাৎক্ষণিকভাবে বদলি করা হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সূত্রে জানা যায়, দিলীপ কুমার আগরওয়ালা এবং ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের আয়কর নথিতে পাওয়া কর ফাঁকির তদন্তও একইভাবে ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে।

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের প্রায় ৩০টি শোরুম রয়েছে। প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ কোটি টাকার ডায়মন্ড বিক্রি করা হলেও, বিগত ১৫ বছরে দিলীপ কুমার আগরওয়ালা কোনো ভ্যাট প্রদান করেননি। এনবিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২৮টি শোরুম থেকে বছরে ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। তদন্ত শুরু হলে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে দিলীপ সেই তদন্তকে বাধাগ্রস্ত করেন। যারা তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তাদের বিভিন্ন জায়গায় বদলি করা হয়।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়েমা ওয়াজেদ পুতুলের সঙ্গে ছবি তুলে, তা সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ভয় দেখানোর জন্য ব্যবহার করতেন দিলীপ। তিনি নিশ্চিত করতেন যে তার বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ না নেওয়া হয়।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১০ অক্টোবর দিলীপ কুমার আগরওয়ালার বিরুদ্ধে প্রধান কার্যালয়ে একটি অভিযোগ জমা পড়ে। সেখানে সোনা ও হীরা চোরাচালানের মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকি এবং শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। এরপর সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) দিলীপের আয়কর নথি ও ভ্যাট ফাঁকির তদন্ত শুরু করে, যা রহস্যজনক কারণে পরে বন্ধ হয়ে যায়।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক বছর ধরে দেশে কোনো ডায়মন্ড আমদানি হয়নি। দিলীপ ডায়মন্ড আমদানি করেছিলেন নাকি অন্য কিছু বিক্রি করছিলেন, তা খতিয়ে দেখা হবে। ডায়মন্ড আমদানি করলে ১৫০ শতাংশের বেশি ট্যাক্স দেওয়ার কথা ছিল, সেটাও তদন্তের আওতায় থাকবে।

ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের বিক্রয়কর্মীরা জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ছয় মাস আগে এনবিআর দিলীপ আগরওয়ালাকে ৭৭০ কোটি টাকা জরিমানা করেছিল, যা ভিভিআইপি এক ব্যক্তির হস্তক্ষেপে স্থগিত করা হয়। এরপর থেকে সব তদন্ত কার্যক্রম থমকে যায়।

জানা গেছে, দিলীপ আগরওয়ালা আওয়ামী লীগের শিল্প বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন এবং স্বর্ণ চোরাচালানের সাথে জড়িত ছিলেন। বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগও তার বিরুদ্ধে রয়েছে।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে খুনের মামলার আসামি হয়েও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে কোটা সংস্কারের আন্দোলনে পুলিশ প্রশাসনকে টাকা দিয়ে ছাত্রদের ওপর আক্রমণ চালানোর অভিযোগও রয়েছে। এছাড়া, তিনি আরও বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার পরও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের স্বর্ণ চোরাচালানের রুটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের তদন্তেও দিলীপ আগরওয়ালার নাম উঠে আসে। এর পরও তাকে প্রকাশ্যে ঘুরতে দেখা যায়।

সোনা চোরাচালান, হীরা প্রতারণা, হুন্ডি বাণিজ্যসহ অজ্ঞাতসূত্রে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হওয়া দিলীপ আগরওয়ালাকে নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত হয় মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার আটকের পর। পিয়াসার স্বীকারোক্তিতে উঠে আসে, মিশু-পিয়াসা চক্র অবৈধভাবে আনা সোনা ও ভেজাল হীরা কম দামে দিলীপের কাছে বিক্রি করত, যার ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারিয়েছে।

দুদকের কাছে দেওয়া অভিযোগে বলা হয়েছে, দিলীপ অবৈধভাবে অর্থ পাচার করে কলকাতায় তিনটি জুয়েলারি, ১১টি বাড়ি, কানাডা এবং দুবাইয়ে আলিশান বাসভবন তৈরি করেছেন। তিনি ৪০ কোটি টাকা দিয়ে একটি ব্যাংকের পরিচালকও হয়েছেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *