উচ্চ আদালতের রায়ের পাঁচ বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় বঞ্চিত বোধ করছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নন-ক্যাডার প্রধান শিক্ষকরা। ২০১৮ সালের ১৫ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট নন-ক্যাডার আইন অনুযায়ী প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের গেজেটেড করার নির্দেশ দেন, যা তিন মাসের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। তবে এখনো সেই আদেশ কার্যকর হয়নি। প্রধান শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে আসছে। তারা বৈষম্যের শিকার হলেও বিগত সরকার এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
২০১৬ সালে ৩৪তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নন-ক্যাডারদের মধ্য থেকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের সুপারিশ করে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। নন-ক্যাডার নিয়োগবিধি ২০১০ (সংশোধিত ২০১৪) অনুযায়ী সুপারিশ করা হলেও নন-ক্যাডার নিয়োগবিধি লঙ্ঘন করে তাদের ১২তম গ্রেডে পদায়ন করা হয়, যেখানে তাদের ১০ম গ্রেডে নিয়োগ পাওয়ার কথা ছিল।
বৈষম্য নিয়ে ২০১৮ সালের ১৫ জানুয়ারি পিএসসি চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেন প্রধান শিক্ষকরা। প্রতিকার না পেয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন (পিটিশন নম্বর-৩৭৪৯/২০১৮) দায়ের করেন তারা। হাইকোর্ট ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর পূর্ণাঙ্গ রায়ে ৬০ দিনের মধ্যে নন-ক্যাডার বিধি অনুযায়ী পদোন্নতির নির্দেশ দেন। তবে সরকার আপিল করলে রায় শিক্ষকদের বিপক্ষে যায়। এরপর শিক্ষকরা রিভিশন আবেদন করেন এবং রিভিশনের রায়ে তাদের পক্ষে আদেশ আসে। এতে বলা হয়, তিন মাসের মধ্যে নন-ক্যাডার আইন অনুযায়ী তাদের পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নন-ক্যাডার প্রধান শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, তারা দীর্ঘদিন বৈষম্যের শিকার হয়ে বর্তমান সরকারের উপদেষ্টাদের কাছে আবেদন করেছেন। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রতিলিপিসহ সুবিচারের আশায় তারা আবেদন করেছেন।
নওগাঁ সদরের খাস-নওগাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও রিটকারী মো. মেজবাউল হক বলেন, সরকারি কর্ম কমিশন, মন্ত্রণালয় এবং অধিদফতর বৈষম্যের বিষয়টি স্বীকার করলেও সমাধানে কেউ এগিয়ে আসেনি। বরং একে অপরের ওপর দায়িত্ব চাপিয়ে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। সর্বশেষ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চও বৈষম্য নিরসনের নির্দেশ দিলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় তা আটকে আছে। তিনি বলেন, “আমরা বিসিএস উত্তীর্ণ হয়ে কেবল সাংবিধানিক অধিকার—দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড পদ চেয়েছি, যা আমাদের প্রাপ্য।”
ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক মো. সজিবুল হাসান বলেন, “একই বিসিএসে মেধাতালিকায় আমাদের পরে থেকেও অনেকে দশম গ্রেডে পদায়িত হয়েছেন, অথচ আমাদের ১২তম গ্রেডে রাখা হয়েছে। উচ্চ আদালতের রায় থাকার পরও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। প্রয়োজনে আমরা আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।